আজ রবিবার, ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শতবর্ষী রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়

মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চ

মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চ
এম.এ মোমেন, রূপগঞ্জ :
নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ১৯০১ সাল থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। রূপগঞ্জের প্রথম প্রতিষ্ঠিত এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন বিভাগে বর্তমানে অবদান রেখে চলছেন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতিকের অগ্রণী ভূমিকায় বিদ্যালয়ের ব্যাপক উন্নয়ণ হয়েছে। মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেয়া, সমৃদ্ধশালী কম্পিউটার ল্যাব, বিজ্ঞানাগার, মিলনায়তন, ডিজিটাল হোয়াইট বোর্ড, লাইব্রেরী সবুজে ঘেরা বিশাল খেলার মাঠ ও ৮টি ভবন বিদ্যমান। তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি শিক্ষা প্রদান চলছে। ১১৭ বছর ধরে বিদ্যালয়টি স্বমহিমায় গৌরবের পথ চলায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে অবস্থিত প্রাকৃতিক পরিবেশে সু-বিশাল সবুজ ঘাসে ঘেরা কয়েকটি নতুন উঁচু ভবন। এ ভবনগুলোতেই মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ দান হয়। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনগুলো অপসারণ করে গত নয় বছরে নতুন তিনটি ভবন নির্মাণ ও আরো একটি ভবনের তৃতীয় তলা বর্ধিত করা হয়েছে। বিদ্যালয়েটি স্থাপিত হওয়ার পর ডেমরা, কালীগঞ্জ, সোনারগাঁও ও আড়াইহাজার উপজেলাসহ আশপাশের শিক্ষার্থীরা এ প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতেন। এ স্কুলে লেখাপড়া করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান ড. কাজী দীন মোহাম্মদ, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. রফিকুল ইসলাম মীর, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান ভুঁইয়া, রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক আনিসুল হক ভুঁইয়া, প্যানপ্যাসিফিক হাসপাতালের এমডি ডাঃ সাদিকুর রহমানসহ বহু চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সেনা অফিসার ।

১৬ বিঘা জমি নিয়ে উপজেলা কমপ্লেক্সের অদূরে ১৯০১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন বাবু রাজ মোহন সরকার। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে এমপিও, নন এমপিও এবং পার্টটাইম শিক্ষকসহ ৪৫জন শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২ হাজার ২৬৪ জন।বিদ্যালয় থেকে পাস করা অনেক ছাত্র এখন জেলা প্রশাসক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত আছেন।

বৃটিশ শাসনামলে জমিদার হরেন্দ্র নারয়ণ ব্যানার্জী ১৯০১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৪ সালে তাঁর ছেলে জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণ ব্যানার্জী বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করেন। মুড়াপাড়ার শিবগঞ্জে ভিক্টোরিয়া এইচ ই স্কুল নামে বিদ্যালয় প্রথম যাত্রা শুরু করা হয়। পরে মুড়াপাড়া শরিয়তগঞ্জ মৌজায় বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছোট বড় ৮টি ভবন রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় তিনতলা বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক বিদ্যালয় ভবন ও শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ল্যাবটি ২০১৬ সালের ১৩ আগষ্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিং এ উদ্বোধন করেন। এছাড়া রয়েছে একটি ভোকেশনা শাখা ভবন।

প্রতি বছর বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিসহ ফলাফল সন্তোষজনক। এসএসসি পরীক্ষায়ও শিক্ষার্থীরা ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করছে। প্রতিবছরই কেউ কেউ বিভিন্ন নামীদামী কলেজে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। খেলাধুলায় উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পুরুস্কার পাচ্ছে। সংগীতে চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠে স্থান করে নিয়েছে এ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সাকি রেজোয়ানা নদী।

বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ রাজনৈতিক সমাবেশ করেছেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শীতলক্ষ্যা নদী পথে বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছিলেন।
এ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধক্ষ্য (একাডেমিক) আবু জাফর আল আমিন বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে পাঠদানের জন্য এ বিদ্যালয় দিন দিন ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, বিদ্যালয় চলাকালীন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বাইরে যেতে পারে না। গেইটে নিরাপত্তা কর্মী বসানো হয়েছে। টিফিনের সময় ছাত্রছাত্রীদের বাহিরে যেতে হয় না। স্কুলেই ক্যান্টিন রয়েছে। বিদ্যালয়টি অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।

এ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি হাজী মোঃ মাহমুদ হাসান বলেন, দীর্ঘ দিনের অবহেলিত ঐতিহ্যবাহী মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতিক সুপারিশসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ আলম বলেন, যথাসময়ে ক্লাস বসে ও ছুটি হয়। একাডেমিক নিয়মানুযায়ী সকল কার্যক্রম চলে। ডিজিটাল পান্স মেশিনে শিক্ষক শিক্ষিকাগণ হাজিরা প্রদান করায় এখানে সময়ের ফাঁকি চলে না। এ বিদ্যালয়ে এসএসি, এসএসসি (ভোকেশনাল) এসএসসি (উন্মূক্ত), জেএসসি, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি (বিএম) পরীক্ষার সেন্টার থাকার কারণে বিদ্যালয়ের গুরুত্ব আরো বাড়ছে।

বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আল-আমিন ভুঁইয়া বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করা হয়েছে। নতুন নতুন ভবন হয়েছে। শিক্ষার মান যাচাই করার জন্য ক্লাস পরীক্ষা, সাপ্তাহিক ও মাসিক পরীক্ষা নেয়া হয়। প্রায়শই মা ও অভিভাবক সমাবেশ করে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার মান উন্নয়ণে বিদ্যালয়টি অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও বিদ্যালয়ের সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতিক বলেন, রূপগঞ্জের প্রথম প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটি ইতিমধ্যে জাতীয়করণের তালিকার অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এখানে ভৌত অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় দক্ষ শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছে।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ